(ﷺ) শাফা‘আতে
[1] সূরা (২) বাকারা: ৪৮ আয়াত।
২ : ৪৮ وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا لَّا تَجۡزِیۡ نَفۡسٌ عَنۡ نَّفۡسٍ شَیۡئًا وَّ لَا یُقۡبَلُ مِنۡهَا شَفَاعَۃٌ وَّ لَا یُؤۡخَذُ مِنۡهَا عَدۡلٌ وَّ لَا هُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۴۸﴾و اتقوا یوما لا تجزی نفس عن نفس شیئا و لا یقبل منها شفاعۃ و لا یؤخذ منها عدل و لا هم ینصرون ﴿۴۸﴾
আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
[2] সূরা (২) বাকারা: ১২৩ আয়াত।
২ : ১২৩ وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا لَّا تَجۡزِیۡ نَفۡسٌ عَنۡ نَّفۡسٍ شَیۡئًا وَّ لَا یُقۡبَلُ مِنۡهَا عَدۡلٌ وَّ لَا تَنۡفَعُهَا شَفَاعَۃٌ وَّ لَا هُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۱۲۳﴾و اتقوا یوما لا تجزی نفس عن نفس شیئا و لا یقبل منها عدل و لا تنفعها شفاعۃ و لا هم ینصرون ﴿۱۲۳﴾
আর তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না এবং কোন ব্যক্তি থেকে বিনিময় গ্রহণ করা হবে না আর কোন সুপারিশ তার উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
[3] সূরা (২) বাকারা: ২৫৪ আয়াত।
২ : ২৫৪ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ یَوۡمٌ لَّا بَیۡعٌ فِیۡهِ وَ لَا خُلَّۃٌ وَّ لَا شَفَاعَۃٌ ؕ وَ الۡكٰفِرُوۡنَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۵۴﴾یایها الذین امنوا انفقوا مما رزقنكم من قبل ان یاتی یوم لا بیع فیه و لا خلۃ و لا شفاعۃ و الكفرون هم الظلمون ﴿۲۵۴﴾
হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম।
[4] সূরা (৩৬) ইয়াসীন: ২৩ আয়াত।
৩৬ : ২৩ ءَاَتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِهٖۤ اٰلِهَۃً اِنۡ یُّرِدۡنِ الرَّحۡمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغۡنِ عَنِّیۡ شَفَاعَتُهُمۡ شَیۡئًا وَّ لَا یُنۡقِذُوۡنِ ﴿ۚ۲۳﴾ءاتخذ من دونهٖ الهۃ ان یردن الرحمن بضر لا تغن عنی شفاعتهم شیئا و لا ینقذون ﴿۲۳﴾
আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ গ্রহণ করব? যদি পরম করুণাময় আমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধারও করতে পারবে না’
[5] সূরা (৬) আন‘আম: ৫১ আয়াত।
৬ : ৫১ وَ اَنۡذِرۡ بِهِ الَّذِیۡنَ یَخَافُوۡنَ اَنۡ یُّحۡشَرُوۡۤا اِلٰی رَبِّهِمۡ لَیۡسَ لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ وَلِیٌّ وَّ لَا شَفِیۡعٌ لَّعَلَّهُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۵۱﴾و انذر به الذین یخافون ان یحشروا الی ربهم لیس لهم من دونهٖ ولی و لا شفیع لعلهم یتقون ﴿۵۱﴾
আর এ দ্বারা তুমি তাদেরকে সতর্ক কর, যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের দিকে সমবেত করা হবে, (এ অবস্থায় যে) তিনি ছাড়া তাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী আর না সুপারিশকারী। হয়ত তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে।
[6] সূরা (৬) আন‘আম: ৭০ আয়াত।
৬ : ৭০ وَ ذَرِ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَهُمۡ لَعِبًا وَّ لَهۡوًا وَّ غَرَّتۡهُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَ ذَكِّرۡ بِهٖۤ اَنۡ تُبۡسَلَ نَفۡسٌۢ بِمَا كَسَبَتۡ ٭ۖ لَیۡسَ لَهَا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِیٌّ وَّ لَا شَفِیۡعٌ ۚ وَ اِنۡ تَعۡدِلۡ كُلَّ عَدۡلٍ لَّا یُؤۡخَذۡ مِنۡهَا ؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ اُبۡسِلُوۡا بِمَا كَسَبُوۡا ۚ لَهُمۡ شَرَابٌ مِّنۡ حَمِیۡمٍ وَّ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ بِمَا كَانُوۡا یَكۡفُرُوۡنَ ﴿۷۰﴾و ذر الذین اتخذوا دینهم لعبا و لهوا و غرتهم الحیوۃ الدنیا و ذكر بهٖ ان تبسل نفس بما كسبت ٭ لیس لها من دون الله ولی و لا شفیع و ان تعدل كل عدل لا یؤخذ منها اولٓئك الذین ابسلوا بما كسبوا لهم شراب من حمیم و عذاب الیم بما كانوا یكفرون ﴿۷۰﴾
আর তুমি পরিত্যাগ কর তাদেরকে, যারা নিজদের দীনকে গ্রহণ করেছে খেল-তামাশা রূপে এবং প্রতারিত করেছে যাদেরকে দুনিয়ার জীবন। আর তুমি কুরআন দ্বারা উপদেশ দাও, যাতে কোন ব্যক্তি তার কৃতকর্মের দরুন ধ্বংসের শিকার না হয়, তার জন্য আল্লাহ ছাড়া নেই কোন অভিভাবক এবং নেই কোন সুপারিশকারী। আর যদি সে সব ধরণের মুক্তিপণও দেয়, তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। এরাই তারা, যারা ধ্বংসের শিকার হয়েছে তাদের কৃতকর্মের দরুন। তাদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানীয় এবং বেদনাদায়ক আযাব, যেহেতু তারা কুফরী করত।
[7] সূরা (৩২) সাজদা: ৪ আয়াত।
৩২ : ৪ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ مَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا شَفِیۡعٍ ؕ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوۡنَ ﴿۴﴾الله الذی خلق السموت و الارض و ما بینهما فی ستۃ ایام ثم استوی علی العرش ما لكم من دونهٖ من ولی و لا شفیع افلا تتذكرون ﴿۴﴾
আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই এবং নেই কোন সুপারিশকারী। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
[8] সূরা (১০) ইউনুস: ১৮ আয়াত।
১০ : ১৮ وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَضُرُّهُمۡ وَ لَا یَنۡفَعُهُمۡ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ قُلۡ اَتُنَبِّـُٔوۡنَ اللّٰهَ بِمَا لَا یَعۡلَمُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۱۸﴾و یعبدون من دون الله ما لا یضرهم و لا ینفعهم و یقولون هؤلآء شفعآؤنا عند الله قل اتنبـٔون الله بما لا یعلم فی السموت و لا فی الارض سبحنهٗ و تعلی عما یشركون ﴿۱۸﴾
আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আসমানসমূহ ও যমীনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন’? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।
[9] সূরা (৩৯) যুমার: ৪৪ আয়াত।
৩৯ : ৪৪ قُلۡ لِّلّٰهِ الشَّفَاعَۃُ جَمِیۡعًا ؕ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ ثُمَّ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۴۴﴾قل لله الشفاعۃ جمیعا لهٗ ملك السموت و الارض ثم الیه ترجعون ﴿۴۴﴾
বল, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহর মালিকানাধীন। আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। তারপর তোমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’।
[10] সূরা (২) বাকারা: ২৫৫ আয়াত।
২ : ২৫৫ اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ ؕ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ ۚ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرۡسِیُّهُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُهٗ حِفۡظُهُمَا ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۲۵۵﴾الله لا اله الا هو الحی القیوم لا تاخذهٗ سنۃ و لا نوم لهٗ ما فی السموت و ما فی الارض من ذا الذی یشفع عندهٗ الا باذنهٖ یعلم ما بین ایدیهم و ما خلفهم و لا یحیطون بشیء من علمهٖ الا بما شآء وسع كرسیه السموت و الارض و لا یـٔودهٗ حفظهما و هو العلی العظیم ﴿۲۵۵﴾
আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি স্বাধীন ও নিত্য নতুন ধারক, সব কিছুর ধারক। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারেনা। তাঁর আসন আসমান ও যমীন ব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে বিব্রত হতে হয়না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান। (আয়াতুল কুরসী)
[11] সূরা (১০) ইউনুস: ৩ আয়াত।
১০ : ৩ اِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ مَا مِنۡ شَفِیۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِهٖ ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُ ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ ﴿۳﴾ان ربكم الله الذی خلق السموت و الارض فی ستۃ ایام ثم استوی علی العرش یدبر الامر ما من شفیع الا من بعد اذنهٖ ذلكم الله ربكم فاعبدوه افلا تذكرون ﴿۳﴾
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
[12] সূরা (১৯) মারইয়াম: ৮৭ আয়াত।
১৯ : ৮৭ لَا یَمۡلِكُوۡنَ الشَّفَاعَۃَ اِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنۡدَ الرَّحۡمٰنِ عَهۡدًا ﴿ۘ۸۷﴾لا یملكون الشفاعۃ الا من اتخذ عند الرحمن عهدا ﴿۸۷﴾
যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তারা ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না।
[13] সূরা (২০) তাহা: ১০৯ আয়াত।
২০ : ১০৯ یَوۡمَئِذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوۡلًا ﴿۱۰۹﴾یومئذ لا تنفع الشفاعۃ الا من اذن له الرحمن و رضی لهٗ قولا ﴿۱۰۹﴾
সেদিন পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দিবেন আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন তার সুপারিশ ছাড়া কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না।
[14] সূরা (৩৪) সাবা: ২৩ আয়াত।
৩৪ : ২৩ وَ لَا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا لِمَنۡ اَذِنَ لَهٗ ؕ حَتّٰۤی اِذَا فُزِّعَ عَنۡ قُلُوۡبِهِمۡ قَالُوۡا مَاذَا ۙ قَالَ رَبُّكُمۡ ؕ قَالُوا الۡحَقَّ ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡكَبِیۡرُ ﴿۲۳﴾و لا تنفع الشفاعۃ عندهٗ الا لمن اذن لهٗ حتی اذا فزع عن قلوبهم قالوا ماذا قال ربكم قالوا الحق و هو العلی الكبیر ﴿۲۳﴾
আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কারো উপকার করবে না। অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় বিদূরিত হবে তখন তারা বলবে, ‘তোমাদের রব কী বলেছেন’? তারা বলবে, ‘সত্যই বলেছেন’ এবং তিনি সুমহান ও সবচেয়ে বড়।
[15] সূরা (২১) আম্বিয়া: ২৮ আয়াত
২১ : ২৮ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مَا خَلۡفَهُمۡ وَ لَا یَشۡفَعُوۡنَ ۙ اِلَّا لِمَنِ ارۡتَضٰی وَ هُمۡ مِّنۡ خَشۡیَتِهٖ مُشۡفِقُوۡنَ ﴿۲۸﴾ یعلم ما بین ایدیهم و ما خلفهم و لا یشفعون الا لمن ارتضی و هم من خشیتهٖ مشفقون ﴿۲۸﴾
তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। আর তারা শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা তাঁর ভয়ে ভীত।*
[16] সূরা (৫৩) নাজম: ২৬ আয়াত।
৫৩ : ২৬ وَ كَمۡ مِّنۡ مَّلَكٍ فِی السَّمٰوٰتِ لَا تُغۡنِیۡ شَفَاعَتُهُمۡ شَیۡئًا اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اَنۡ یَّاۡذَنَ اللّٰهُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَرۡضٰی ﴿۲۶﴾و كم من ملك فی السموت لا تغنی شفاعتهم شیئا الا من بعد ان یاذن الله لمن یشآء و یرضی ﴿۲۶﴾
আর আসমানসমূহে অনেক ফেরেশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে আসবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট, তার ব্যাপারে অনুমতি দেয়ার পর।
৭৩:১৫ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلَیۡكُمۡ رَسُوۡلًا ۬ۙ شَاهِدًا عَلَیۡكُمۡ كَمَاۤ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ رَسُوۡلًا ﴿ؕ۱۵﴾انا ارسلنا الیكم رسولا شاهدا علیكم كما ارسلنا الی فرعون رسولا ﴿۱۵﴾
নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্বাক্ষীস্বরূপ তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি যেমনিভাবে ফির‘আউনের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।
৯. ২. শাফাআত বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা
কুরআনে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিয়ামাতের দিন কোনো শাফা‘আত কবুল করা হবে না, আল্লাহ ছাড়া কেউ শাফা‘আতের অধিকার রাখবে না এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো শাফা‘আতকারী থাকবে না। কয়েকটি আয়াত দেখুন:
وَاتَّقُوا يَوْمًا لا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
‘‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যে দিন কেউ কারো কাজে আসবে না এবং কারো শাফাআত (সুপারিশ) স্বীকৃত হবে না এবং কারো নিকট হতে ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।’’[1]
وَاتَّقُوا يَوْمًا لا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
‘‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর যে দিন কেউ কারো উপকার করবে না এবং কারো নিকট হতে কোন ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং কোন শাফাআত কারো উপকারে লাগবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না।’’[2]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ
‘‘হে মু’মিনগণ, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে তোমরা ব্যয় কর সে দিন আসার পূর্বে- যে দিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং শাফাআত থাকবে না।’’[3]
أَأَتَّخِذُ مِنْ دُونِهِ آَلِهَةً إِنْ يُرِدْنِ الرَّحْمَنُ بِضُرٍّ لا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلا يُنْقِذُونِ
‘‘আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ গ্রহণ করব? দয়াময় আল্লাহ আমার অমঙ্গল চাইলে তাদের শাফাআত-সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’[4]
وَأَنْذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْ يُحْشَرُوا إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِنْ دُونِهِ وَلِيٌّ وَلا شَفِيعٌ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
‘‘তুমি এ দ্বারা তাদেরকে সতর্ক কর যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রভুর নিকট সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতীত তাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো শাফাআতকারীও থাকবে না; হয়ত তারা সাবধান হবে।’’[5]
وَذَكِّرْ بِهِ أَنْ تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلا شَفِيعٌ
‘‘এ দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দাও, যাতে কেউ নিজ কৃত কর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লাহ ব্যতীত তার কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো সুপারিশকারীও থাকবে না।’’[6]
مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلا شَفِيعٍ أَفَلا تَتَذَكَّرُونَ
‘‘তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না।’’[7]
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلا فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করে তারা তাদের ক্ষতিও করে না উপকারও করে না। তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের শাফাআতকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশম-লী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান পবিত্র এবং তাদের শির্ক থেকে তিনি অতি ঊর্ধ্বে।’’[8]
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘‘বল, সকল সুপারিশ আল্লাহরই, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’’[9]
এ সকল আয়াতে বাহ্যত শাফা‘আত অস্বীকার করা হয়েছে। এ সকল আয়াত থেকে মু’তাযিলা ও অন্যান্য ফিরকা দাবি করে যে, কিয়ামাতের দিন কারো শাফা‘আতে কোনো পাপীর ক্ষমালাভের ধারণা বাতিল ও ভিত্তিহীন।
বস্ত্তত এ সকল আয়াতে মূলত শাফা‘আত বিষয়ে মুশরিকদের বিশ্বাস খন্ডন করা হয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ওহীর জ্ঞানের সাথে কিছু কল্পনা যোগ করে কাফিরগণ বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর ফিরিশতাগণ, নবীগণ বা প্রিয়পাত্রগণ শাফা‘আতের ক্ষমতা ও অধিকার সংরক্ষণ করেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে এ ধরনের ক্ষমতা ও অধিকার দিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের ইচ্ছামত যাকে ইচ্ছা সুপারিশ করে মুক্তি দিতে পারবেন। মহান আল্লাহ তাদের এ ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করে জানিয়েছেন যে, শাফা‘আতের মালিকানা, অধিকার ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
অন্যান্য আয়াতে শাফা‘আতের স্বীকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি শাফা‘আত করবেন তিনি যদি শাফা‘আত করার জন্য মহান আল্লার অনুমতি গ্রহণ করেন এবং যার জন্য শাফা‘আত করবেন তার প্রতি যদি মহান আল্লহ সন্তুষ্ট থাকেন তবে সেক্ষেত্রে শাফা‘আত করার সুযোগ আল্লাহ প্রদান করবেন। যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন তার জন্য কেউই শাফা‘আত করবে না। সর্বাবস্থায় শাফা‘আত গ্রহণ করা বা না করা মহান আল্লাহর ইচ্ছা। এ অর্থের কয়েকটি আয়াত দেখুন:
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلا بِإِذْنِهِ
‘‘কে সে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?’’[10]
يُدَبِّرُ الأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ
‘‘তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই।’’[11]
لا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
‘‘শাফাআতের মালিকানা তাদের কারো নেই। তবে ব্যতিক্রম সে ব্যক্তি যে দয়াময়ের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে।’’[12]
يَوْمَئِذٍ لا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلا
‘‘দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সে দিন কোন কাজে আসবে না।’’[13]
وَلا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘‘যাকে অনুমতি দেয়া হয় সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারো সুপারিশ কার্যকর হবে না।’’[14]
আমরা দেখেছি যে, কাফিরগণ ফিরিশতাগণের শাফাআত বিষয়ক বক্তব্য অপব্যাখ্যা করে ফিরিশতাগণের শাফাআত লাভের আশায় তাঁদের ইবাদত করত। কুরআনে তাদের এ বিভ্রান্তি অপনোদন করা হয়েছে। একস্থানে আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يَشْفَعُونَ إِلا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ.
‘‘তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’’[15]
আল্লাহ ফিরিশতাদের বা অন্যান্য সম্মানিত সৃষ্টির ‘শাফা‘আতের’ সুযোগ অস্বীকার করেন নি, কাফিরদের ‘বিকৃতি’ খন্ডন করেছেন। কাফিরগণ আল্লাহর সাথে ফিরিশতা বা প্রিয় বান্দাগণের সম্পর্ককে পৃথিবীর রাজাবাদশার সাথে আমলা-চামচাদের সম্পর্কের মত মনে করেছে। অন্যায়কারী ব্যক্তি রাজার অজ্ঞাতে তার কোনো প্রিয়পাত্রকে তোয়াজ করে সুপারিশ আদায় করে নিতে পারে। আর এরূপ সুপারিশে শাসক বা রাজা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। আর এক্ষেত্রে সুপারিশ প্রার্থী উক্ত ‘আমলা’-কে যে কোনো প্রকারে ভক্তি বা তোয়াজ করে সুপারিশ আদায়ের চেষ্টা করেন। উক্ত রাজাকে যেমন ভক্তি তোয়াজ করেন, আমলাকেও তদ্রূপ বা তার চেয়ে বেশি করলেও অসুবিধা নেই।
মহান আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তির স্বরূপ তুলে ধরেছেন। ফিরিশতাগণ বা অন্যান্য ‘সম্মানিত বান্দাগণ’ ‘আল্লাহর বান্দা’। তাঁরা ‘আল্লাহর সন্তান’ নন। তাঁদের কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই বা ‘ইবাদত (চূড়ান্ত ভক্তি) লাভের অধিকার নেই। ফিরিশতাগণ বা আল্লাহর অন্যান্য প্রিয় বান্দগণের সুপারিশ কখনোই জাগতিক রাজা-বাদশাহগণের কাছে আমলাদের সুপারিশের মত নয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। ফিরিশতাগণ বা নেক বান্দাগণ সদা সর্বদা তাঁরই ভয়ে ভীত। তাঁরা শুধু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্যই আল্লাহর কাছে শাফাআত করেন। যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে শাফাআত করেন না। সর্বোপরি কার জন্য কার সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে মহান আল্লাহই সবচেয়ে বেশি ও ভাল জানেন।
এ বিষয়ে অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
‘‘আকাশে কত মালাক (ফিরিশতা) রয়েছে তাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুসারে কাউকে অনুমতি দেন।’’[16]
এভাবে কুরআন ‘মালাক’গণের শাফা‘আত অস্বীকার করছে না। তবে তাঁদের শাফা‘আতের মালিকানা বা ক্ষমতার ধারণা অস্বীকার করছে। শাফা‘আতের মালিকানা ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা যখন অনুমতি প্রদান করবেন সে তখন কেবলমাত্র যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন তাদেরই জন্য সুপারিশ করবেন।
উপরের আয়াতগুলি থেকে আমরা নিম্নের বিষয়গুলো বুঝতে পারি:
(১) শাফা‘আতের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো শাফা‘আতের কোনো মালিকানা, ক্ষমতা বা অধিকার নেই।
(২) আল্লাহ অনুমতি দিলে কেউ শাফ‘আত করতে পারবেন।
(৩) যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট শুধু তাকেই অনুমতি প্রদান করবেন।
(৪) আল্লাহর অনুমতিক্রমে ফিরিশতাগণ সুপারিশ করবেন বলে কুরআনে স্পষ্টত বলা হয়েছে। এছাড়া অন্য কারা তাঁর অনুমতিক্রমে সুপারিশ করতে পারবেন তা স্পষ্টত উল্লেখ করা হয় নি। হাদীস শরীফে এ বিষয়ক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
(৫) যে ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করা হবে তার জন্য আল্লাহর অনুমোদন পূর্বশর্ত।
(৬) যে ব্যক্তির প্রতি স্বয়ং আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন সে ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য কেউ সুপারিশ করবেন না।
বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে যে, কিয়ামাতের দিন নবীগণ ও অন্যান্য মানুষ এবং মানুষের বিভিন্ন আমল শাফা‘আত করবে এবং তাদের শাফা‘আত কবুল করা হবে। এ সকল হাদীসের বিস্তারিত আলোচনার জন্য বৃহৎ পরিসরের প্রয়োজন। হাদীসে বর্ণিত শাফা‘আতের পর্যায়গুলো নিম্নরূপে ভাগ করা যায়:
(১) শাফা‘আতে উযমা (الشفاعة العظمى) বা মহোত্তম শাফা‘আত। এদ্বারা বিচার শুরুর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করা বুঝানো হয়। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কিয়ামাতের দিন মানুষ বিভিন্ন নবী-রাসূলের নিকট গমন করে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট গমন করবেন। তিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শাফা‘আত করবেন, মানুষদের বিচার শেষ করে দেওয়ার জন্য।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে মহান আল্লাহ তাঁর উম্মাতের অনেক গোনাহগারকে ক্ষমা করবেন।
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে অনেক পাপী মুসলিম জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
(৪) উম্মাতে মুহাম্মাদীর অনেক নেককার মানুষ শাফা‘আত করবেন।
(৫) সন্তানগণ তাদের পিতামাতাদের জন্য শাফা‘আত করবে।
(৬) কুরআন তার পাঠক ও অনুসারীদের জন্য শাফা‘আত করবে।
(৭) সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত শাফা‘আত করবে।
কেউ যদি আল্লাহ থেকে বিমুখ থাকে, ঈমান বিশুদ্ধ না করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা না করে কিন্তু কোনো ফিরিশতা, নবী বা ওলীকে বিশেষভাবে ভালবাসে, তাঁকে ভক্তি-সম্মান করে বা সর্বদা তাঁর জন্য দু‘আ করে এবং আশা করে যে, উক্ত ফিরিশতা, নবী বা ওলী তাকে সুপারিশ করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা করবেন তবে তা ভিত্তিহীন দুরাশা ও শিরকের রাজপথ ছাড়া কিছুই নয়।
পক্ষান্তরে কেউ যদি ঈমান ও তাওহীদ বিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন, কিন্তু মানবীয় দুর্বলতায় বা শয়তানের প্ররোচনায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন তবে মহান আল্লাহ তাঁর আন্তরিকতা ও চেষ্টার প্রতি সন্তুষ্ট হলে তাঁর কোনো সম্মানিত বান্দাকে তার জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি প্রদান করবেন। মূল বিষয় আল্লাহর সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ কোনো পাপী বান্দার তাওহীদ ও ঈমানে সন্তুষ্ট হলে তিনি নিজেই তাঁকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। অথবা তাঁর কোনো সম্মানিত বান্দাকে সম্মান করে তার জন্য শাফা‘আতের অনুমতি দিতে পারেন।
মু’তাযিলাগণ শাফা‘আতে উযমা স্বীকার করে; কারণ তা তাদের মূলনীতির পরিপন্থী নয়। পাপী মুমিনের জন্য শাফা‘আত বিষয়ক অন্যান্য আয়াত ও হাদীসকে তারা শাফা‘আতে উযমা বলে ব্যাখ্যা করে। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণ সহীহ হাদীসে প্রমাণিত সকল প্রকারের শাফা‘আতেই বিশ্বাস করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, শাফ‘আতের মালিকানা একমাত্র মহান আল্লাহরই। তিনি যার উপর সন্তুষ্ট হবেন তার জন্য তিনি দয়া করে শাফা‘আতের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি যার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন তার জন্য তাঁর অনুমতিপ্রাপ্ত কেউ শাফা‘আত করলে তিনি ইচ্ছা করলে তা কবুল করে গোনাহগার মুমিনকে ক্ষমা করতে পারেন।